শ্রী দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুমার ঝুলি আমার বাড়িতে কোনোদিন ছিলনা। কিন্তু তাই বলে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি বা লালকমল- নীলকমলের গল্প জানিনা এমনটাও না। কারণ বাড়িতে ঠাকুমা ছিলো। শিশুর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে শারীরিক গঠনের সাথে মানসিক গঠনেরও প্রয়োজনীয়তা আছে। আমাদের ছোটবেলায় ঠাকুমা-ঠাকুরদা বা দাদু- দিদাদের শুধু ভালোবাসাই পাইনি তার সাথে অনেক সংষ্কৃতিও আমরা আহরণ করেছি। আমার ঠাকুরদাকে জ্ঞানত অবস্থায় কখনও দেখিনি, শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে ঠাকুমার সাথে। গল্প শোনা থেকে শুরু করে বই পড়ার নেশা সবটাই ঠাকুমার থেকেই পাওয়া। তখন এখনকার মতো এত শিশু বিনোদনের মাধ্যম ছিলোনা, কাজেই বই পড়াটাই সবচেয়ে সহজলভ্য ছিলো। তখনকার দিনে বিবাহ অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়ার চল ছিলো, বাড়িতে যত বই ছিলো তারমধ্যে অধিকাংশই উপহার পাওয়া। আর সবচেয়ে বেশি ছিলো বঙ্কিমচন্দ্রের বই, মনে পড়ে মাত্র ন বছর বয়সে আনন্দমঠ পড়েছিলাম। বই পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে একটু স্বাদ বদলের জন্যে ঠাকুমাকে বলতাম গল্প শোনাতে। একেকসময় একেকরকম গল্প। ভূত থেকে শুরু করে ভ্রমণকাহিনী কোনোটাই বাদ যায়নি। সাপ্তাহিক আনন্দমেলা থেকে শুরু করে পুজাবার্ষিকী ঠাকুমার আর আমার উত্তেজনা থাকতো একই রকম। এখন কিছুটা হলেও বুঝি যে ঠাকুমাদের নাতি-নাতনিদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা কোনো দায়বদ্ধতা বা চাওয়া-পাওয়ার থেকে আসেনা। জীবনের সায়াহ্নে দাড়িয়ে ভালোবাসা ছড়িয়ে যাওয়া তাদের কাজ। বাবা মা সংসার সামলাতে যখন ব্যস্ত থাকে তখন তারা ব্যস্ত থাকেন বাড়ির ছোটদের অন্যায় আবদার মেটাতে। তার সাথে জীবনের দর্শন কিছুটা হলেও শিশুদের মনে মিশিয়ে দিতে, শিশুমনকে পরিপূর্ণতা দিতে। কিন্তু আজকের এই অতিকুঞ্চিত পরিবারব্যবস্থায় আমাদের উত্তরসূরিরা কি পাবে সেই সুযোগ? আজকাল ঠাকুমার পাশে বসে শিশুরা মোবাইলেই ব্যস্ত, আর ঠাকুমারা জলসা বা জীবন মানেই জী বাংলা। আশ্চর্য!! আসল ঠাকুমারা সব গেলেন কোথায়?
ব্লগ ২ – ঠাকুমার ঝুলি
Posted in Uncategorized | Tags: Thoughts
ব্লগ ১ – ভালো-ভাষা
ব্লগিং শুরু করার আগে দরকার মাধ্যম ঠিক করে নেওয়া। ব্লগিং করছি নিজের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্যে, ঠিক ডাইরির মতো। যাতে আবার পরে ফিরে এসে নিজেই একটু চেখে নেওয়া যায় বোয়ামে রাখা পুরনো আমের আচারের মতো; আমরা হৃদয়ের গভীরে থেকে যাওয়া পুরনো স্মৃতি দেখতে অনেক ভালোবাসি তাই। মাধ্যম হয়তো ইংরেজিও হতে পারতো কিন্তু তাতে কি অনুভূতির সঠিক মূল্যায়ন হয়? যে ভাষা আমাকে প্রথম অনুভূতির আদানপ্রদান শিখিয়েছে সেটাকেই মাধ্যম হিসাবে বেছে নিতে হলো। কারণ মনের ভাবপ্রকাশের এর থেকে ভালো মাধ্যম আর তো হবেনা। আমি বাংলা ব্যাকরণই হয়তো পুরোটা জানিনা এখনো, শব্দভান্ডারও অনেক সীমিত। কাজেই যেখানে নিজের মাতৃভাষার আনাচে-কানাচে এখনও পুরোদস্তুর ঘুরে বেড়ানো হয়ে ওঠেনি সেখানে অন্য ভাষা নিয়ে বেশি কাটাছেঁড়া করার ধৃষ্টতা আমার নেই। ভাষা তো ভালো হওয়া নিয়ে কথা, দামী না হলেও চলবে। ইদানিং অনেক বিতর্ক উঠছে ভাষা নিয়ে, কিন্তু যে ভাষা দিয়ে মাছের ঝোলের মতো জ্যোৎস্না গড়িয়ে পরে সে ভাষা ছাড়া আর কোনো ভাষায় সেই ভালোবাসা আসেনা আমার। সকালে উঠে যেদিন চায়ের বদলে bed-tea চাইবো সেদিন নাহয় মাধ্যম বদলানোর কথা আরেকবার ভেবে দেখা যাবে।
Posted in Uncategorized